২৪খবর বিডি : ' পূর্বাচলে প্লট বিক্রির কথা বলে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নেয়া ৬ কোটি ৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে আরেক ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। তিনি নভেলটি কোম্পানি নামের একটি জমি কেনাবেচার প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। প্লট দেয়ার নামে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে চুক্তিপত্র করে কয়েক ধাপে ৬ কোটি ৭ লাখ টাকা নেন মোস্তাফিজুর রহমান। পরে জমি দিতে না পারায় ৩ কোটি টাকা ফেরত দিলেও বাকি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করছেন তিনি। চুক্তি অনুযায়ী জমির জন্য দেয়া টাকা ফেরত না পাওয়ায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। টাকা চাওয়ায় বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ওই ব্যবসায়ী।'
* মামলা সূত্রে জানা যায়, ধানমণ্ডির ১১/এ রোডে একই বিল্ডিং-এ বসবাসের সুবাদে মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে লাভলী রিয়েল এস্টেট কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিলেটের জালালাবাদ থানার মোঘলগাঁও গ্রামের মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে সাতক্ষীরা জেলার সদর থানার ঘরচালা গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান খালেদা মঞ্জু নামের একজন প্লট গ্রহীতাকে বোন পরিচয় দিয়ে তার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের এক নম্বর সেক্টরের ৪০৮ নম্বর সড়কের ১ নম্বর প্লটটি মুজিবুর রহমানের কাছে বিক্রি করে দেয়ার চুক্তি করেন। ছয় কোটি সাত লাখ টাকায় সাড়ে সাত কাঠার এই প্লটটি (আমমোক্তারনামা দলিলমূলে) মধ্যস্থাকারী হিসেবে পরিকল্পনা মোতাবেক বিক্রির বন্দোবস্ত করেন মোস্তাফিজুর রহমান।
পূর্বাচলে প্লট দেয়ার নামে ৬ কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা
* ২০২০ সালের ১০ই মার্চ থেকে ১লা আগস্ট পর্যন্ত তিন কিস্তিতে মোট ৬ কোটি ৭ লাখ টাকা গ্রহণ করে একটি চুক্তিপত্রও সম্পাদন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ওই প্লটটি হস্তান্তর বিলম্ব হওয়ায় ২০২১ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর ৭০ লাখ টাকা, ১৮ই অক্টোবর ৮০ লাখ টাকা, ২৫শে অক্টোবর ১ কোটি ৫০ লাখ টাকাসহ মোট ৩ কোটি টাকা মুজিবুর রহমান বরাবর পরিশোধ করেন মোস্তাফিজুর রহমান। সেই সঙ্গে একটি অঙ্গীকার নামা প্রদান করেন- যাতে গত ১৭ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই প্লট রেজিস্ট্রি এবং হস্তান্তরের ব্যবস্থা করার। অন্যথায় পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে সমুদয় টাকা এককালীন পরিশোধ করবেন বলে লিখিতভাবে অঙ্গীকার করেন তিনি। কিন্তু এরপরও নির্ধারিত সময়ে প্লট হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হলে অঙ্গীকার মোতাবেক মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে প্লটটি রেজিস্ট্রি প্রদানসহ হস্তান্তর বা টাকা ফেরত চাইলে তিনি উল্টো হুমকি প্রদান করেন। গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তিনি মুজিবুর রহমানের বাসার ঠিকানায় কাফনের কাপড় পাঠিয়ে নানা রকম ভয়ভীতি দেখান বলে মুজিবুর রহমান অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে ধানমণ্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। যার নং-১৪৯০, (তারিখ ২৮-১২-২০২০)। * জিডি করার পর গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি মোস্তাফিজুর রহমান কৌশলে মুজিবুর রহমানকে দেয়া অঙ্গীকারনামা স্ট্যাম্পটি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন এবং নানা রকমের হুমকি প্রদান করলে মুজিবুর রহমান ধানমণ্ডি মডেল থানায় আরও একটি জিডি করেন। (জিডি নং ৮১১, তারিখ ১৪-০২-২০২২)। কিন্তু মুজিবুর রহমান তার দেয়া টাকার জন্য মোস্তাফিজুর রহমানকে চাপ দিলে জিডির দু’দিন পর ১৬ই ফেব্রুয়ারি ক্ষিপ্ত হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান তার ধানমণ্ডিস্থ বাসায় মুজিবুর রহমানকে ডেকে নিয়ে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে মারধর করেন। ভবিষ্যতে টাকা বা প্লট চাইলে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন বলে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে ধানমণ্ডি থানায় অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন মুজিবুর রহমান। গত ২২শে ফেব্রুয়ারি দায়ের করা মামলাটি প্রথমে পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব পায়। পরে বাদীর আবেদনে মামলার তদন্তভার সিআইডিকে দেয়ার আদেশ দেন আদালত। যদিও এখনো পিবিআই মামলার নথিপত্র সিআইডিকে বুঝিয়ে দেয়নি। নথি দিতে বিলম্ব করায় বাদী পুলিশ সদর দপ্তরে পিবিআই থেকে সিআইডিতে নথি হস্তান্তরের জন্য আবেদন করেছেন। পিবিআই-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহেরুল হক চৌঞান ও পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম বাবুল মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। মামলার সাক্ষীকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ করেছেন স্বাক্ষী শংকর কুমার শিকদার। তিনি একটি জিডিও করেছেন।
* অভিযোগ রয়েছে সাতক্ষীরার অতি সাধারণ পরিবারের সন্তান এক সময় সাধারণ জীবনযাপন করতেন। সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় এসে তিনি বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে শামীমের জি কে বিল্ডার্সের কর্মচারীর কাজ নেন। এক সময় তিনি জি কে শামীমের বডিগার্ড হিসেবে দায়িত্ব পান। শামীমের ছত্রছায়ায় থেকে গণপূর্ত অধিদপ্তরে নিজের অবস্থান তৈরি করেন। জি কে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর কিছুদিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকার পর মোস্তাফিজুর নিজেই নভেলটি কোম্পানি নামে প্লট ও জমি বেচাকেনার প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন। মোস্তাফিজুর রহমান নিজেকে সরকারের শীর্ষ পদধারীদের নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে নানা জনের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগ রয়েছে। এসব করে তিনি ইতিমধ্যেই অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ধানমণ্ডিতে আলিশান যে ফ্ল্যাটে থাকেন এর মূল্য তিন কোটি টাকারও বেশি। এ ছাড়া নামে-বেনামে তার আরও অঢেল সম্পদ রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রের দাবি। এসব তথ্য দিয়ে প্রতারণা ও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনেও অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
* অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোস্তাফিজুর রহমানের লালমাটিয়ার সি ব্লকের ৩/৪ ঠিকানার কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার ম্যানেজার সুমন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মোস্তাফিজুর রহমান কোথায় অবস্থান করছেন তা জানা নেই। মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে গত কয়েকদিন ধরে ফোন করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। মুজিবুর রহমানের দায়ের করা মামলায় সুমন নিজেও আসামি। অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি মিথ্যা মামলা। মামলায় আমরা জামিন নিয়েছি। মোস্তাফিজুর রহমান জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন না বলেও দাবি করেন তিনি।